আন্তর্জাতিক ডেস্ক//মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড অপরিহার্য। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তিনি বলেন, আর্কটিক দ্বীপটিতে তিনি যে বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন, তিনি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সবার আগে নেতৃত্ব দেবেন। রবিবার লুইজিয়ানার গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে গ্রিনল্যান্ডের জন্য বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড নতুন করে তীব্র সমালোচনা জানিয়েছে। খনিজসম্পদসমৃদ্ধ আর্কটিক দ্বীপটিকে ঘিরে ওয়াশিংটনের আগ্রহ নিয়ে আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল তারা।
ডেনমার্কের স্বশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই কথা বলে আসছেন ট্রাম্প। তার যুক্তি, দ্বীপটির কৌশলগত গুরুত্ব ও খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বিশেষ দূত জেফ ল্যান্ড্রিও প্রকাশ্যে এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন।
ফ্লোরিডার পাম বিচে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের গ্রিনল্যান্ড দরকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য, খনিজের জন্য নয়। গ্রিনল্যান্ডের উপকূল জুড়ে তাকালে দেখা যাবে, সর্বত্র রুশ ও চীনা জাহাজ। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আমাদের এটি দরকার, আমাদের এটি পেতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন, এই কাজে ল্যান্ড্রি ‘লিড দ্য চার্জ’ করতে চান।
এর আগে এক যৌথ বিবৃতিতে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন বলেন, গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীরই।
তারা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়েও আরেকটি দেশকে দখল করা যায় না। গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীর, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড দখল করতে পারে না।’
এদিকে জেফ ল্যান্ড্রি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার লক্ষ্যে এই স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পাওয়া আমার জন্য সম্মানের। এতে লুইজিয়ানার গভর্নর হিসেবে আমার দায়িত্বে কোনও প্রভাব পড়বে না।’
এই ইস্যুতে ডেনমার্কের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে নির্মাণাধীন পাঁচটি বড় অফশোর উইন্ড প্রকল্পের লিজ স্থগিত করা হয়েছে, যার মধ্যে ডেনমার্কের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কোম্পানি অরস্টেডের দুটি প্রকল্পও রয়েছে।
প্রায় ৫৭ হাজার জনসংখ্যার গ্রিনল্যান্ড একসময় ডেনমার্কের উপনিবেশ ছিল। ২০০৯ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী দ্বীপটির স্বাধীন অধিকার রয়েছে, তবে এখনও তারা ব্যাপকভাবে মৎস্য খাত ও ডেনমার্কের ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মাঝামাঝি অবস্থানের কারণে গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি দ্বীপটির খনিজ সম্পদ চীনা রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা কমানোর ক্ষেত্রেও আগ্রহ বাড়িয়েছে।
রোববার ট্রাম্পের ঘোষণার পর গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিলসেন ফেসবুকে লেখেন, ‘আমরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একটি নতুন ঘোষণায় ঘুম ভাঙালাম। এটি বড় শোনালেও আমাদের জন্য কিছুই বদলায় না। আমাদের ভবিষ্যৎ আমরা নিজেরাই নির্ধারণ করব।’
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন সোমবার জানান, তিনি কোপেনহেগেনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ হাওয়ারিকে তলব করবেন।
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই একজন বিশেষ মার্কিন দূত নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি নিজেই বলছেন গ্রিনল্যান্ড দখলের দায়িত্ব তার। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’
গত এক বছরে ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি আর্কটিক অঞ্চলের প্রতিরক্ষা জোরদার করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছিল।