আন্তর্জাতিক ডেস্ক//বিশ্ববাজারে মূল্যবান ধাতুর দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বুধবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৫০০ ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। স্বর্ণের পাশাপাশি রুপা ও প্লাটিনামের দামও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতি ও বাণিজ্য ঝুঁকি এবং আগামী ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার আরও কমার সম্ভাবনায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে মূল্যবান ধাতুর দিকে ঝুঁকছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বুধবার দিনের শুরুতে স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৫২৫ দশমিক ১৯ ডলারে উঠে এক নতুন ইতিহাস গড়ে। গ্রিনিচ মান সময় ০৫টা ৫২ মিনিটে এর দাম কিছুটা কমে ৪ হাজার ৪৯৫ দশমিক ৩৯ ডলারে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ড ফিউচারে ফেব্রুয়ারির সরবরাহের জন্য স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৫২২ দশমিক ১০ ডলারে পৌঁছেছে।
স্বর্ণের পথ ধরে রুপা এবং প্লাটিনামের দামও লাফিয়ে বাড়ছে। রুপার দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৭২ দশমিক ৭০ ডলারে পৌঁছেছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। প্লাটিনামের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৩৭৭ দশমিক ৫০ ডলারে এবং প্যালাডিয়াম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯১৬ দশমিক ৬৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিনিয়োগ বিশ্লেষণী সংস্থা টেস্টিলাইভ-এর গ্লোবাল ম্যাক্রো প্রধান ইলিয়া স্পিভাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা এবং বিশ্বায়নের বিপরীত স্রোত বা ডি-গ্লোবালাইজেশন-এর কারণে বিনিয়োগকারীরা এমন সম্পদ খুঁজছেন যেটির কোনও সার্বভৌম ঝুঁকি নেই। তিনি আরও পূর্বাভাস দেন যে, আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলার এবং রুপা ৮০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
চলতি বছর স্বর্ণের দাম এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, যা ১৯৭৯ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ বার্ষিক বৃদ্ধি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ কেনা, ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা এবং ইটিএফ প্রবাহ এই দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। একই সময়ে রুপার দাম বেড়েছে প্রায় ১৫০ শতাংশ।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, স্বর্ণ ও রুপা এই সপ্তাহে গতির দ্রুততর করেছে। বিশ্বজুড়ে ঋণের বোঝা এবং সুদের হার কমার প্রত্যাশায় মানুষ সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে এই ধাতুগুলোকে বেছে নিচ্ছে।
গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গমন কমাতে ব্যবহৃত প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দাম বৃদ্ধির পেছনে খনি থেকে সরবরাহে ঘাটতি এবং শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্লাটিনামের দাম প্রায় ১৬০ শতাংশ এবং প্যালাডিয়ামের দাম ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, স্বর্ণের দাম বাড়ার পর এখন প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়াম সেই দৌড়ে শামিল হয়েছে।