ডেস্ক রিপোর্ট//চাঁদপুর শহরের একটি মসজিদে জুমার নামাজ শেষে কুপিয়ে জখম করার পর মারাত্মক আহত ইমাম এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি আগের থেকে সুস্থ আছেন বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন। এই ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন আহত ইমাম মাওলানা আ ন ম নূর রহমান মাদানীর বড় ছেলে আফনান তাকি। এছাড়া শুক্রবারই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত মো. বিল্লাল হোসেন নামে একজনকে পুলিশ আটক করেছে। বিল্লাল পুলিশের কাছে স্পষ্ট স্বীকার করেছেন, ইমামকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই সে তার উপর হামলা করেছে।
এছাড়া তাকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালতের কাছেও দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
চাঁদপুর পৌর এলাকার প্রফেসরপাড়া মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজে খুতবা ও আলোচনার সময় মাওলানা নূর রহমান মাদানীর বক্তব্যে ক্ষিপ্ত হন ওই এলাকার তরকারি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন। নামাজ শেষে বিল্লাল দেশীয় অস্ত্র (চাপাতি) নিয়ে মসজিদের ভেতরেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে ইমামের ওপর হামলা চালান। এতে মাথা এবং কানে গুরুতর জখম হন মাওলানা আ ন ম নুর রহমান মাদানী। পরে মুসল্লিরা তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং হামলাকারীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
বিল্লালকে আটক করে থানায় নিয়ে গেলে সে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নবীকে খাটো করে দেখার অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয়ে ইমামকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে এবং শুক্রবার সে নামাজশেষে চাপাতি দিয়ে মসজিদের ইমাম আ ন ম নুর রহমান মাদানীর উপর ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। তবে বিল্লাল হোসেন পুলিশের কাছে তার ভুল স্বীকার করে৷
এদিকে বিল্লালকে শনিবার চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। আসামি বিল্লালকে জিজ্ঞাসাবাদশেষে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয় বলে আইনজীবী আবদুল কাদের জিলানি মিল্টন জানান এবং রবিবার তাকে আবার কোর্টে হাজির করলে ৭ দিন রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুর রকিব জানান, আসামি বিল্লাল নিজেই এই নির্মম কাজটি সম্পন্ন করেছে। তাকে আমরা খুব দ্রুত আটক করেছি। সে কোনও ধর্মীয় উগ্র সংগঠনের সাথে জড়িত কিনা এমনটা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, না এমন কোনও সন্ধান আমরা পাইনি। এ হত্যা চেষ্টার বিষয়টির তদন্তকাজ চলছে। এছাড়া তাকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে প্রেরণ করলে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
আহত ইমামের ছেলে আফনান তাকি জানান, আমার বাবার ওপর বর্বরোচিত হামলার বিচার চাই। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে এসেছি। বর্তমানে তিনি হলি কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং শঙ্কামুক্ত।
চাঁদপুরে এই ইমামকে হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার বিকালে চাঁদপুর জেলা শহর জামায়াতের উদ্যোগে শহরের কালিবাড়ি বাইতুল আমিন জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা জামায়াতের আমির বিল্লাল হোসেন, জেলা সেক্রেটারি অ্যাড. শাহাজাহান মিয়া, উপজেলা ও শহর জামায়াতের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। জামায়াত নেতারা বলেন, মসজিদে ঢুকে ইমামের উপর এমন ন্যক্করজনক হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এর পেছনে আরও জড়িত থাকলে তাদের বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।