1. masudkhan89@yahoo.com : admin :
  2. banglarmukhbd24@gmail.com : News Editor : News Editor
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

আমাদের অর্থবছর বৈশাখ-চৈত্র নয় কেন?

বাংলার মুখ বিডি ২৪ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩
  • ৬৭ বার সংবাদ দেখেছেন
আমাদের অর্থবছর বৈশাখ-চৈত্র নয় কেন?
আমাদের অর্থবছর বৈশাখ-চৈত্র নয় কেন?

বাংলাদেশ এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি। বছরের বাজেট এবং উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য আমাদের দাতাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো দাতা সংস্থাদের ওপর সব সময় নির্ভর করতে হয় না।

কয়েকটি দেশের অর্থবছর : অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের একটি অর্থবছর (জুলাই-জুন) আছে। পাকিস্তানে যা ছিল তা-ই আছে। কিছু নীতিনির্ধারক এখনো পাকিস্তানের বাইরে বেরোতে পারেননি। সব দেশই তাদের নিজেদের সুবিধামতো অর্থবছর অনুসরণ করে। যেমন-ভারত : ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ; চীন : ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর; জাপান : ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ; যুক্তরাজ্য : এপ্রিলের ১ম সোমবার থেকে মার্চের শেষ রোববার অথবা এপ্রিলের ১ম রোববার; যুক্তরাষ্ট্র : ১ অক্টোবর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর; পাকিস্তান : ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন।

বাংলাদেশের অর্থবছর : বাস্তবে বাংলাদেশে কি শুধু একটি অর্থবছর আছে? জুলাই-জুন সরকারি বাজেট বা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব করা হয়। বৈশাখ-চৈত্র জমির খাজনার হিসাব মোগল আমল থেকে চলে আসছে। ব্যবসায়ীরা ১ বৈশাখ হালখাতা খুলে বছরের হিসাব শুরু করেন এবং চৈত্রসংক্রান্তিতে শেষ করেন। একটি অর্থবছর সরকারি আর অন্যটি বেসরকারি।

এটি একটি জগাখিচুড়ি অবস্থা। জটিল আইন, বিধিবিধান যে কোনো দেশের অগ্রগতির প্রধান বাধা। সহজ ও স্বচ্ছ আইন-কানুন উন্নয়নকে গতিশীল ও ত্বরান্বিত করে। সব বিষয়ের জন্য বাংলাদেশে দুটির পরিবর্তে একটি অর্থবছর থাকা যুক্তিসংগত। পাকিস্তানি জুলাই-জুনের পরিবর্তে বৈশাখ-চৈত্র (১৪ এপ্রিল থেকে পরের বছরের ১৩ এপ্রিল) অর্থবছর বাংলাদেশের জন্য অধিক উপযোগী ও বাস্তবসম্মত মনে হয়। উপরোক্ত কিছু দেশের অর্থবছর এপ্রিলে শুরু হয়। বৈশাখও মধ্য এপ্রিলে শুরু হয়। জুলাইয়ের সঙ্গে মাত্র আড়াই মাসের তফাৎ। অর্থবছর এ অল্প কয়েক দিন এগিয়ে আনা কোনো জটিল বিষয় নয়।

বাংলা সন : বাংলা সনের শুরু কর আদায় এবং ঋণ পরিশোধের সুবিধার জন্য, অর্থাৎ বিষয়টি রাজস্বসংক্রান্ত। এটি স্পষ্টতই একটি রাজস্ব বা অর্থবছর হিসাবে চালু করা হয়। মোগল সম্রাট আকবর ৯৬৯ হিজরি সন অর্থাৎ ১৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে এ বাংলা সন চালু করেন; উদ্দেশ্য ছিল ৩৫৪ দিনের হিজরি সনের সঙ্গে ৩৬৫ দিনের সৌর বছরের ১১ দিনের ঘাটতি দূর করা।

অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, মোগল জ্যোতির্বিদ পণ্ডিত আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজী সম্রাট আকবরকে তার শাসন অমর করে রাখার জন্য বাংলা সন চালুর পরামর্শ দেন। আকবরের অর্থমন্ত্রী তোডরমলও এতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। হিজরি সন হলো চান্দ্র বছর। ফলে প্রতিবছর হিজরি সন ১১ দিন করে বাড়তে থাকে। বাংলা সন শুরু হয় সৌর বছর হিসাবে। বাংলার মুসলিম শাসকরা কর আদায় করতেন হিজরি সন অনুযায়ী। এতে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে তারিখের মিল থাকত না। ফসল ওঠার সঙ্গে মাস বা দিনের কোনো সংগতি থাকত না। এখনো যেমন রোজা, ঈদ, কুরবানি কখনো শীতে, কখনো গ্রীষ্মে, কখনো বর্ষায়-তেমনি।

তাই এ নতুন সনকে বলা হতো ফসলি সন। মূলত এটি হিজরি চান্দ্রসনেরই সৌর সংস্করণ। গণনা শুরু হয় সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের দিন ১ মহররম থেকে, যেদিন হিজরি বছর শুরু হয়। সেই দিনটিকে ১ বৈশাখ ধরা হলো। নামগুলো এ অঞ্চলে প্রচলিত পুরোনো বর্ষপঞ্জি, রাশিচক্র, গ্রহ-নক্ষত্রের নাম থেকে নেওয়া হয়। তখন যে হিজরি সন ছিল, বাংলা সনকেও সেই একই সন ধরা হলো। হিজরি ৯৬৯ সনে চালু করা এ নতুন সনকে তখন ৯৬৯ বঙ্গাব্দ ধরা হয়। প্রতিবছর ১১ দিন এগিয়ে যাওয়ায় ৪৭৪ বছর পর হিজরি সনের সঙ্গে বাংলা সনের ব্যবধান হয়েছে ১৪ বছর। তাই বর্তমানে হিজরি সন ১৪৪৪ আর বাংলা সন ১৪৩০।

বর্তমান রেওয়াজ : খ্রিষ্টীয় সনের ব্যবহার প্রধানত সরকার ও শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। গ্রামবাংলায় এখনো জন্ম, মৃত্যু, উৎসব, পালা-পার্বণে বাংলা সনের ব্যবহার হয়। বর্তমানে জাতীয় সংসদে বাজেট পাশের পর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় টাকা পৌঁছাতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। বেশিরভাগ সময়ই টাকা পেতে এবং কেনাকাটা শুরু করে অন্য কাজে হাত দিতে বর্ষা এসে পড়ে এবং অর্থবছর শেষ হয়ে যায়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অসম্পূর্ণ কাজগুলো আবার পরের বছর জমা হতে থাকে। তখন আর নতুন কাজ হাতে নেওয়ার সুযোগ থাকে না।

বৈশাখ-চৈত্র অর্থবছর : এদেশে উন্নয়ন কার্যক্রম সাধারণত শুকনো মৌসুমে হয়। যদি অর্থবছর মাস দুয়েক এগিয়ে আনা যায়, অর্থাৎ অর্থবছর বৈশাখ-চৈত্র হলে শুকনো মৌসুম পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে এবং তাড়াহুড়া করে শেষ সময়ে যেনতেনভাবে টাকা খরচ করার সুযোগ ও সরকারি অর্থের অপচয় অনেকটা কমে যাবে। বাংলা সনকে শুধু নববর্ষ আর রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রশাসনে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমনটি এখন বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করা হচ্ছে-যা মাত্র কিছুদিন আগেও অকল্পনীয় ছিল।

পাকিস্তান ফ্যাক্টর : বাংলাদেশে বৈশাখ থেকে অর্থবছর চালু করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হলো নীতিনির্ধারকদের একাংশ, যারা বঙ্গবন্ধুসৃষ্ট এ জাতি-রাষ্ট্রের সবচেয়ে সুবিধাভোগী। তারা এখনো তাদের প্রিয় পাকিস্তানকে ভুলতে পারে না। পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণায় মোহাবিষ্ট এ ক্ষমতাধররা পাকিস্তানি কোনোকিছু পরিবর্তন করতে গেলেই নানা রকমের খোঁড়া যুক্তি খাড়া করে-এসবে হাত দিলে বাংলাদেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। যেভাবে আছে সেভাবেই চলুক। উটকো ঝামেলায় যাওয়ার দরকার কী? অর্থাৎ পাকিস্তানের মতোই থাকুক। অতি সূক্ষ্মভাবে সরকারের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

ভারত ফ্যাক্টর : অনেকে হয়তো মনে করেন, ভারতের বাজেটের কিছুদিন পর বাজেট দিলে তাদের শুল্ক, বাণিজ্য এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা দেখে সেভাবে আমাদের কর, শুল্ক, অর্থ ব্যবস্থাপনা সাজালে সেখানে রপ্তানি বাড়বে আর আমাদের আমদানি সুবিধাজনক হবে। ফলে তাদের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের কোনো বাজেট অধিবেশনে এ প্রসঙ্গে কোনো কথা শোনা যায়নি। এটি পর্যালোচনা হয়েছে এমন আভাসও পাওয়া যায়নি। আসলে ভারতের বাজেট কেউ খেয়ালও করে না।

তাছাড়া বাংলাদেশের সুবিধার্থে বছরের যে কোনো সময় শুল্ক-অশুল্ক ব্যবস্থা সরকার নিতে পারে, যা বাস্তবে এখনো হচ্ছে। উপরন্তু, ভারতে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের বহুমুখীকরণ, চাহিদা বাড়ানো এবং তুলনামূলক কমদাম না হলে রপ্তানি বাড়বে না। তাদের অশুল্ক বাধা শুধু রাজনৈতিক পর্যায়ে দূর করা সম্ভব, আর্থিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নয়। অর্থবছরের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

সুবিধা : অর্থবছরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক উন্নয়ন প্রকল্পের বা নির্মাণ কার্যক্রমের। এদেশের ভূমি ও আবহাওয়ার কারণে শুকনো মৌসুম ছাড়া নির্মাণকাজ শুধু দুরূহ নয়, অত্যন্ত ব্যয়বহুলও বটে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলা সন সমার্থক। বাংলা অর্থবছর বাংলা সনে একীভূত হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ও সাংবিধানিক মর্যাদা একটা নতুন মাত্রা পাবে।

বৈশাখ-চৈত্র অর্থবছর চালু করার জন্য প্রয়োজন একটু রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

মাহমুদুল মাসুদ : মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব

সামাজিক যোগাযোগ এ শেয়ার করুন

একই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © ২০২১ বাংলার মুখ বিডি
ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট @ ইজি আইটি সল্যুশন