বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে গত দুই সপ্তাহ ধরে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ওঠায় জেলায় ৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সকালে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ৮,৪০০ পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিতদের মাঝে ১৪০ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার স্ব-স্ব উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দ্রুত বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মজুদ রয়েছে ৭৭১ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ লাখ টাকা। সেই সাথে বিশেষ বরাদ্দের জন্য ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১ হাজার ব্যান্ডিল ডেউটিন বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চলতি বন্যায় জেলায় প্রায় ৫৬৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে বন্যার্তদের জন্য ১৮৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের চিকিৎসার জন্য ২৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সর্বক্ষণিক টিম কাজ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, যমুনা নদীর পানি বাড়ার কারণে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ৯১০৬ হেক্টর জমির রোপা আমন, পাট, তিল, মরিচ, বাদাম, বোনা আমন, শাক-সব্জি, বীজতলাসহ উঠতি ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফীউল্লাহ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম মন্ডল জানান, যমুনার পানি বাড়ার কারণে জেলার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল এলাকায় ৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি নেমে গেলে দ্রুত পরিস্কার করে পাঠদান শুরু করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, জেলার কাজিপুর পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যমুনা নদীর পানি সব পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে সেটা স্বাভাবিক বন্যা। যমুনা অধ্যুষিত এ জেলাতে প্রতি বছরই এমন বন্যা হয়ে থাকে। নদীর অভ্যন্তরীণ নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। এখন পর্যন্ত বড় ধরণের কোন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, সব সময় জেলার বন্যার্ত মানুষের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ও স্ব-স্ব উপজেলার ইউএনওরা নিয়মিত তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন।
তিনি আরও জানান, বন্যার্তদের জন্য ৯১১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পেয়েছি। এরই মধ্যে ১৪০ মেট্রিক টন চাল, ৬ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করা হয়েছে।