আন্তর্জাতিক ডেস্ক//চীনের বিরুদ্ধে জাপানের উপকূল ঘেঁষে আক্রমণাত্মক মহড়া পরিচালনার অভিযোগ তুলেছে দেশটির সেনাবাহিনী। পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দুদেশের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক বাগযুদ্ধের মধ্যে এই ঘটনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাপানের সেলফ ডিফেন্স ফোর্স সোমবার (৮ ডিসেম্বর) অভিযোগ করে, চীনের বিমানবাহী রণতরি ‘লিয়াওনিং’ শনিবার জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপপুঞ্জের কাছ দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা প্রায় শ’খানেক উড্ডয়ন ও অবতরণের মহড়া চালিয়েছে। ওই রণতরির গতিবিধি পর্যবেক্ষণে জাপানের পাঠানো যুদ্ধবিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার সংকেত পাঠিয়েছে।
উল্লেখ্য, কোনও বাহনের দিকে রাডার সংকেত সম্ভাব্য হামলার সতর্কতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ ঘটনার পরদিন চীনা রাষ্ট্রদূত উ জিয়াংহাওকে ডেকে ‘বিপজ্জনক ও দুঃখজনক আচরণের’ প্রতিবাদ জানায় জাপান।
তবে চীনা দূতাবাস জাপানের অভিযোগ অস্বীকার করে পালটা দাবি করে, জাপানের বিমান বরং লিয়াওনিংয়ের কাছে বিপজ্জনকভাবে এগিয়ে গিয়ে মহড়ায় বাগড়া দিয়েছে।
জাপানকে ‘মিথ্যাচার’ বন্ধের দাবি জানিয়ে দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের ফ্রন্টলাইনে সংযম দেখাতে হবে এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে, চীনের বিবৃতিতে জাপানের মন্ত্রিসভার মুখ্যসচিব মিনোরু কিহারা বলেন, জাপানের বিমান চীনের নিরাপদ উড্ডয়ন ব্যাহত করার অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি সতর্ক করে বলেন, জাপান “শান্ত কিন্তু দৃঢ়ভাবে” পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং দেশের জলসীমায় চীনা বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখবে।
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম দ্বীপমালার কাছে বিরোধপূর্ণ এসব ঘটনার সূত্রপাত হয় গত মাসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের কোনও সামরিক পদক্ষেপ জাপানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেললে তার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।
তাকাইচির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং তার নাগরিকদের জাপান ভ্রমণ এড়ানোর পরামর্শ দেয়। এছাড়া, ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের প্রক্রিয়াজাত পানি সমুদ্রে ছাড়াকে কেন্দ্র করে স্থগিত থাকা জাপানি সামুদ্রিক খাবার আমদানি পুনরায় চালুর পরিকল্পনাও চীন পিছিয়ে দেয়।
গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে বেইজিং নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে। একসময় জাপানের উপনিবেশ থাকা তাইওয়ানের অবস্থান ওকিনাওয়ার পশ্চিম প্রান্ত থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার দূরে।
জাপানের বিরুদ্ধে চীনের রাডার ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা টোকিওর মার্কিন দূতাবাস কোনও মন্তব্য করেনি।
তবে জাপানে দায়িত্বরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ গ্লাস চলমান বিরোধে জাপানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে এখনও কোনও পক্ষ অবলম্বন করেননি।
উল্লেখ্য, বাণিজ্য আলোচনার জন্য সামনের এপ্রিলে বেইজিং সফরের পরিকল্পনা করেছেন ট্রাম্প।