দেশে ‘অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি’র প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল ও সংশ্লিষ্টদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি।
ঢাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার পথে আরামবাগ মোড়ে বিএনপির মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে সেখানেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মীরা। পাবনায় পুলিশের বাধায় স্মারকলিপি দিতে না পেরে শহরের ঘোড়া স্ট্যান্ডে সমাবেশ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে ফেরার পথে তাদের ওপর হামলা করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ।
এতে বিএনপির ১১ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ফেনীতেও কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশোর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপির কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর পল্টন চায়না টাওয়ারের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে ঢাকা জেলা বিএনপি। ১২টা ৫৫ মিনিটে মিছিলটি আরামবাগ মোড়ে পৌঁছায়। সেখানে বিএনপির মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধার মুখে নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আরও অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহ উদ্দিন বাবু, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তমিজ উদ্দিন, যুবদলের রেজাউল কবির পল, ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী।
অবস্থান কর্মসূচিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন বিদেশি চাপের কাছে তিনি মাথা নত করবেন না। আপনি তো প্রধানমন্ত্রী জনগণের কাছেই মাথানত করেন না। কই, সীমান্তে যখন আমাদের লোকজনকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয় তখন তো আপনার মাথা উঁচু করতে দেখি না।
এই সরকারের পতন অনিবার্য উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ-সদস্য বলেছিলেন, ফেরি করে বিদ্যুৎ বিক্রি হবে। ফেরির বিদ্যুৎ এখন কোথায়? এখন তো দেখছি অধিকাংশ পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই সরকার জনগণের অধিকারকে কারাবন্দি করেছে। গোটা দেশকে বন্দিশালা করেছে। এই পরিস্থিতির অবসানের জন্য সব গণতান্ত্রিক শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, এই সরকার বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষ হয়। পরে আরামবাগ মোড় থেকে বিএনপির কয়েকজন নেতা মতিঝিলের ওয়াপদা ভবনের দিকে রওনা দেন। ওয়াপদা ভবনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে গিয়ে স্মারকলিপি দেন তারা। ‘সারা দেশে অসহনীয় লোডশেডিং, বারবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং এই খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে’ বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও স্মারকলিপি দেওয়ার এই কর্মসূচি ৬ জুন ঘোষণা করেছিল বিএনপি।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পাবনা : বিএনপির নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের পাওয়ার হাউজ পাড়ায় বিদ্যুৎ অফিসের দিকে যাচ্ছিল। পথে বড় ব্রিজের মাথায় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে নেতাকর্মীরা শান্ত হয়। পরে নেতাকর্মীরা বড় ব্রিজের পাশে ঘোড়া স্ট্যান্ডে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। একই সময়ে পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম সোহেলের নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে ফেরার পথে লতিফ টাওয়ারের সামনে এলে তাদের ওপর হামলা চালায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টুসহ কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন।
বিকালে পাবনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতেই নারকীয় হামলা চালানো হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা দোকানপাটে লুকিয়ে পড়লেও তাদের ওপর তাণ্ডব চালানো হয়। এদিকে বিকালে কয়েকজন নেতাকর্মী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দেন।
এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ডি,এম, হাসিবুল বেনজীর বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সমাবেশের সময় পাশ দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা যাওয়ার সময় একটা হট্টগোল হয়েছে। কোনো হামলা হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। আমরা তদন্তের পর জানাতে পারব।
ফরিদপুর : বেলা ১১টায় শহরের থানা রোডের কাঠপট্টিতে বিএনপির অফিস থেকে মিছিল নিয়ে বের হন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ঝিলটুলীর বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়ার পথে চৌরাস্তায় বাধা দেয় পুলিশ। বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে যান। সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মো. নাছির ও সাধারণ সম্পাদক ইমান আলী মোল্লার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বিএনপির মিছিলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় পুলিশ দু’পক্ষের মাঝে অবস্থান নেয়। এতে দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা পালটাপালটি স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিএনপি নেতারা বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেন। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা, সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী : শহরের শহিদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিসের সামনে বেলা ১২টায় জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। পরে বিদ্যুৎ অফিসে স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পথে পেছন থেকে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জে জেলা যুবদলের সভাপতি জাকের হোসেন জসিম, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন খোকন চেয়ারম্যানসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর কোনো ধরনের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেনি।
কিশোরগঞ্জ : শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশের পর কিশোরগঞ্জ পিডিবি ও পল্লি বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। সমাবেশে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল প্রমুখ বক্তব্য দেন। পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী ও পল্লি বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের কাছে স্মারকলিপি দেন বিএনপি নেতারা।
রাজশাহী : রাজশাহী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন শওকত। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন ও সদস্য সচিব অধ্যাপক বিশ্বনাথ সরকার, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম : নগরীর আগ্রাবাদ বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টায় বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান ও এনামুল হক এনামের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বিদ্যুৎ অফিসে প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এছাড়া যশোরে শহরতলির চাঁচড়া ওজোপাডিকোর (বিদ্যুৎ ভবন) সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করে জেলা বিএনপি। বগুড়ায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে নেসকো বগুড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মোন্নাফের হাতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
পরে মিছিল ও সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা। সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাগবাড়ীর অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও বিউবো, প্রধান প্রকৌশলীর বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি। কুমিল্লায় শাসনগাছা বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মীরা। পরে বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীকে স্মারকলিপি দেন তারা। ময়মনসিংহে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং পরে নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি।