আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে সংলাপ নিয়ে ভাবছে না বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, কথার ছলে আমু ভাই (আমির হোসেন আমু) কি এক সংলাপের কথা বলেছেন। তারা (বিএনপি) এটাকে আসল কথা ভেবে, এখন সংলাপের মুলা দেখে। আবারও জিহ্বা বেরিয়ে এসেছে। হবে না, হবে না। আপাতত আমরা ভাবছি না। ভাবব কিনা, সেটা পরে দেখা যাবে। আপনাদের সংলাপের মুলা ঝুলিয়ে টেবিলে বসাব? গতবারের কথা মনে আছে? একবার না দুবার তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছি। রেজাল্ট কী? জগাখিচুড়ি।
বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঐতিহাসিক ছয় দফা উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন-দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, ডা. দিলীপ কুমার রায়, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আখতার হোসেন, গোলাম সারোয়ার কবির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু প্রমুখ।
সরকারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আনার ষড়যন্ত্র করে বিএনপি নিজেরাই খাদে পড়েছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল নালিশ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনবে। নালিশ করতে করতে বিএনপি এখন নিজেরাই খাদে পড়েছে। খাদে পড়িয়া বগা কান্দে রে। তারা নালিশ করে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে ভিসানীতি পেয়েছে। এই ভিসানীতিতে আওয়ামী লীগের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কে কার প্রয়োজনে কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না, তা সেই দেশের ব্যাপার। আমরা আমাদের দেশে কাকে ভিসা দেব, কাকে দেব না এটা আমাদের ব্যাপার। এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কী আছে?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভিসানীতিতে আছে, নির্বাচনে যারা বিশৃঙ্খলা করবে, সন্ত্রাস করবে, যারা নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। তারা কারা? তারা বিএনপি। সব নেতার গলা শুকিয়ে গেছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মনোনয়নবাণিজ্যের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন-নমিনেশন লন্ডন থেকে দেয়, ঢাকা থেকে দেয়, নয়াপল্টন থেকে দেয়, গুলশান থেকে দেয়। তিন জায়গা থেকে নমিনেশন বিক্রি করে। এটাই হচ্ছে বিএনপি। শেষ পর্যন্ত গতবারের মতো নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্যেই কি এখন খেলাধুলা করছে? অনেক জায়গায় তিন-চারজনকে নমিনেশন দিয়েছে।
‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিশ্চিত ছাড়া সংলাপ নয়’ মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেবের জিহ্বায় পানি আসছে। মনে করছেন ঠিক ঠিকই আওয়ামী লীগ তাদের সংলাপে ডাকবে। ওই সংলাপের কথা আমরা ভাবছি না। আপনার নেত্রী বলেছে-শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। আপনি শিশু আর পাগলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজে বের করুন। তারপর দেখা যাবে। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফিরে আসবে না জানিয়ে বিএনপিকে মন খারাপ না করার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে বিদেশি বন্ধুরা চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন। তারা চায় ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের নেত্রী বারবার দেশে-বিদেশে আশ্বস্ত করে বলেছেন সেটা। এ নিয়ে কারও মাথাব্যথার কারণ নেই। আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন করব।
জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা (বিএনপি) নির্বাচন ব্যবস্থা গিলে খেয়েছিল। এরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, স্বাধীনতার আদর্শ গিলে খেয়েছে। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এবার যদি ক্ষমতা ফিরে পায়, তাহলে বিএনপি নামক এ বিষধর সাপের দল গোটা বাংলাদেশ গিলে খাবে। কাজেই দেশের মানুষ সাবধান।
এ সময় বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপির কর্মসূচির কঠোর সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বিএনপির শাসনামলে বিদ্যুতের শোচনীয় অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিজেরা বিদ্যুৎ দিতে পারেননি, দিয়েছেন খাম্বা। তিনি বলেন, সংকট সারা বিশ্বে। এজন্য আমাদের দেশে সংকট হয়েছে। এর আগে কোনো সময় বিদ্যুৎ গেছে? কোনো লোডশেডিং হয়েছে? এটা বাংলাদেশে একটা উদাহরণ, বিরাট দৃষ্টান্ত। আজকে আমরা সময় চেয়েছি। আমরা জনগণকে বলেছি ১০-১৫ দিন সহ্য করেন।
সবাইকে বলছি, শেখ হাসিনা যা বলেন, তাই করেন। মুখে যা বলেন কাজে তা করেন। কাজেই তার ওপর বিশ্বাস রাখেন।
বিএনপি নেতা তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতা কই। অনলাইনে কোনো অভ্যুত্থান হবে না। অনলাইনে জনগণ কারও কথায় আন্দোলন করবে না। সৎ সাহস যদি থাকে জেল খাটার জন্য প্রস্তুত হন। রাজপথে এসে সংগ্রাম করে আন্দোলন করে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। সৎ সাহস নেই, তাই পালিয়ে আছেন।
মারামারি-হট্টগোল, বিশৃঙ্খলা : এদিকে আলোচনা সভা চলাকালে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ সমাবেশস্থলের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার সমর্থক এবং রাজধানীর পাশের এক উপজেলার চেয়ারম্যানের সমর্থকরা মারামারিতে জড়ান।
দুপক্ষই একে অপরের দিকে চেয়ার ছুড়ে মারেন। ব্যানার খুলে তাতে ব্যবহৃত বাঁশ আর লাঠি নিয়ে একে অপরকে আঘাত করেন। এ নিয়ে সভায় আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা এদিক-সেদিক দৌড়াতে শুরু করেন। অনেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং আশপাশের বিভিন্ন দোকানের ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেন।
এ সময় অনেকে সাংবাদিকদের বসার জন্য নির্ধারিত চেয়ার টেবিলের ওপরে উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। গণমাধ্যকর্মীদের দু-তিনজন আঘাতও পান। এরই মধ্যে কয়েক দফা চলে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া। পুরো ঘটনা ঘটে সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে। এ সময় মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বারবার মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও কার্যত তার কথা কেউ শোনেননি। এ সময় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এক সময় পরিস্থিতি শান্ত হলেও পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে চলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির শোডাউন। ব্যানার নিয়ে মঞ্চের একেবারে কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায় শত শত নেতাকর্মীকে। অনুষ্ঠান কাভার করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।